স্বদেশ ডেস্ক:
করোনা পরিস্থিতির তেমন কোনো উন্নতি না হওয়া সত্ত্বেও তুলে দেয়া হলো লকডাউন। গতকালও দেশে ১০ হাজার ৪২০ জন করোনা শনাক্ত হয়েছে। তাহলে কি করোনামুক্ত হতে চলেছে দেশ, এই প্রশ্নে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘দেশ করোনামুক্ত হতে যাচ্ছে না বরং কয়েক দিন পর করোনা ভয়াবহ আকার ধারণ করার আশঙ্কা রয়েছে। ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়ার এ সময়ে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ঝড়ের গতিতে বাড়তে পারে। করোনা সংক্রমণ এমনভাবে বেড়ে যেতে পারে যে তা নিয়ন্ত্রণ করা সরকারের জন্য সম্ভব নাও হতে পারে।
এ ব্যাপারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্জারি অনুষদের সাবেক ডিন, শিশু সার্জারি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা: মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, সংক্রমণ না কমিয়ে লকডাউন তুলে নেয়াটা সরকারের সঙ্গত সিদ্ধান্ত হয়নি। ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের এ সময়ে মানুষের অবাধ চলাচল থাকলে একটা সময় সংক্রমণ বেড়ে এমন অবস্থা হতে পারে যে, কোনো হাসপাতালেই ভর্তি করার মতো কোনো বেড পাওয়া যাবে না।
তিনি বলেন, যে লকডাউনটা হলো তা যেমন ছিল ঢিলাঢালা, এটা খুব বেশি কাজে লাগেনি, আবার লকডাউন তুলে দিয়ে অবাধ চলাফেরা করার অনুমতি দেয়ায় করোনা সংক্রমণ বাড়তে পারে সুনামির গতিতে।’
বিশিষ্ট জনস্বাস্থ্যবিদ ডা: আবু জামিল ফয়সাল বলেন, সংক্রমণ না কমিয়ে লকডাউন তুলে দেয়াটা উচিত হয়নি। মানুষতো স্বাস্থ্যবিধি মানতে চায় না। মানুষ মাস্ক পরা ছাড়াই বাইরে চলাচল করবে। ফলে এমন হতে পারে যে সামনের দিনগুলোতে করোনা আক্রান্ত হয়ে মানুষ হাসপাতালে আসবে চিকিৎসা নিতে কিন্তু যথেষ্ট সিট না থাকায় ভর্তি হতে পারবে না, ফলে মৃত্যুও বেড়ে যেতে পারে। ডা:
আবু জামিল ফয়সাল আরো বলেন, মাস্ক পরার আন্দোলনটিকে সরকারও সেভাবে বাস্তবায়ন করল না। মাস্কের প্রতি জোর না দিয়ে সরকার আরো কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করে। এসব বিধিনিষেধ জনগণের কোনো উপকারে আসেনি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাবেক আঞ্চলিক উপদেষ্টা জনস্বাস্থ্যবিদ অধ্যাপক ডা: মোজাহেরুল হক বলেন, লকডাউন তুলে দেয়ায় স্বাভাবিক নিয়মে করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার যথেষ্ট আশঙ্কা রয়েছে। কারণ স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলায় সাধারণ মানুষের খুব বেশি আগ্রহ নেই। মাস্ক, স্যানিটাইজ এবং নির্দিষ্ট দূরত্ব মেনে চলাফেরা করা যেতে পারে, কিন্তু বাস্তবে তা হয় না।
তিনি বলেন, সরকার অর্ধেক বাস চলাচলের অনুমতি দিয়েছে কিন্তু এবার সরকার বলেনি যে, অর্ধেক সিট ফাঁকা রেখে এবং দূরত্ব বজায় রেখে বাসে যাত্রী পরিবহন করতে পারবে। বাসের মধ্যে অবশ্যই মাস্ক ও দূরত্ব বজায় রেখে যাতায়াত করতে হবে। পরে বাস থেকে নেমে গেলে অবশ্যই সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে নিতে হবে। অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে দেখা গেছে, এর কোনো কিছুই মানুষ মানে না। বাস ড্রাইভার অথবা কন্ডাক্টররা এসব মানে না।
অধ্যাপক মোজাহেরুল হক বলেন, করোনায় অনেক সময় উপসর্গ দেখা দেয় না। উপসর্গ না থাকলে একজন মনে করতেই পারেন যে তিনি সুস্থ। কিন্তু তার সংস্পর্শে আসা পাশের ব্যক্তিটির মুখে মাস্ক না থাকলে তিনি করোনায় আক্রান্ত হয়ে যেতে পারেন। সে কারণে সবার মুখে মাস্ক থাকলে এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কিডনি ডিজিজেস অ্যান্ড ইউরোলজি (নিকডু) হাসপাতালে সহযোগী অধ্যাপক ডা: তৌহিদ হোসেন অবশ্য ভিন্ন কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, লকডাউন তুলে দিলেও করোনা সংক্রমণ এখন থেকে কমে যাবে। এ সময়ে সংক্রমণ বাড়ার আশঙ্কা নেই। তবে সামনে অক্টোবর ও নভেম্বর মাসে করোনার আরেকটি ঢেউ আসতে পারে। কিন্তু মানুষ যদি মানসম্মত মাস্ক পরার অভ্যাস করতে পারে তাহলে করোনার ঊর্ধ্বমুখী ঢেউ ভেঙে গিয়ে মোট সংক্রমণ কমে যাবে।